Marathon

দৌড়ে কৈলাস পর্বত ও মানস সরোবর পাড়ি দিতে উদ্যোগী ফুলিয়ার দৌড়বীর মহীতোষ ঘোষ

২০২২ সালে তিনি ফুলিয়া থেকে ২০০০ কিমি পথ দৌড়ে কেদারনাথ যাত্রা সম্পন্ন করেন।২০২৩ সালে তিনি ফুলিয়া থেকে ২৩০০ কিমি পথ উজিয়ে পুরী, ভাইজ্যাক্ হয়ে চেন্নাই পৌঁছান ও ২০২৪ সালে তিনি ফুলিয়া থেকে ২৫০০ কিমি পথ দৌড়ে কাশ্মীর যাত্রায় সাফল্য পান। এবার কৈলাস পর্বত ও মানস সরোবর পাড়ি।

বিদ্যুৎ ভৌমিক  : মানুষ মাত্রেই স্বপ্ন দেখতে ভালোবাসে।তারই মধ্যে কারও স্বপ্নপূরণ হয়, আবার কারও স্বপ্ন অঙ্কুরেই বিনাশপ্রাপ্ত হয়। উদাহরণ স্বরূপ বলা যায় যে, নদীয়া জেলার শান্তিপুর থানার ফুলিয়ার বুঁইচা ঘোষপাড়ার বাসিন্দা ২৫ বৎসর বয়সী দৌড়বীর মহীতোষ ঘোষ মনে মনে স্বপ্নের জাল বুনে ইচ্ছা প্রকাশ করেন যে , তিনি ম্যারাথন দৌড়ে অংশ নিয়ে অভাবনীয় সাফল্য তুলে বিশ্বজয় করবেন ও দেশের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করে আন্তর্জাতিক স্তরে দীর্ঘায়িত পথ অতিক্রম করার তাগিদে ইন্টারন্যাশনাল কম্পিটিশনে যোগ দেবেন ।তাঁর এই স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিতে তিনি বিগত ৭ বৎসর ধরে কঠোর অনুশীলনের মাধ্যমে নিজেকে গড়ে তুলতে সচেষ্ট হয়েছেন ।

কৈলাস পর্বতের সঙ্গে মানস সরোবরে ম্যারাথন যাত্রা 

সাধারণ নিম্ন মধ্যবিত্ত চাষীর ঘরের ছেলে হয়ে পড়াশুনার সঙ্গে সঙ্গতি রেখে ইতিপূর্বে তিনি বিভিন্ন ক্রীড়া প্রতিযোগিতায়  অংশগ্রহণ করে সফলকাম হয়েছেন ।এরই মধ্যে তিনি ফুলিয়া থেকে দৌড়ে চেন্নাই, কাশ্মীর ও কেদারনাথ যাত্রা সম্পন্ন করেছেন ।এবার তাঁর অভীষ্ট লক্ষ্য, কৈলাস পর্বতের সঙ্গে মানস সরোবরে পৌঁছানো।এই দুর্গম পথ অতিক্রম করার তাগিদে তাঁর মনের স্বপ্নকে সার্থক করতে তিনি  প্রস্তুতিতে হাত লাগিয়েছেন।তাঁর এই সফরকে সাফল্যমণ্ডিত করার জন্য তাঁর আত্মীয়স্বজন থেকে শুরু করে প্রতিবেশী, ফুলিয়া শিক্ষানিকেতনের শিক্ষক শিক্ষিকা ও শুভানুধ্যায়ীরা এগিয়ে এসে আর্থিক সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন ।

বিশ্বরেকর্ড করে গিনেস বুক অফ ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসে নাম নথিভুক্ত করা 

সূত্রের খবর, ছোট থেকেই মহীতোষের হাঁপানি রোগের ভোগান্তির শেষ ছিল না ।তার জন্য স্থানীয় চিকিৎসকের শলাপরামর্শে তিনি ফুলিয়া শিক্ষানিকেতনের মাঠে দৌড়ঝাঁপ করতে শুরু করেন ।সেই সময় থেকেই তিনি অ্যাথলেটিক্সের জগতে পা বাড়ান ও বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে অজস্র পুরস্কারে ভূষিত হন । বিশেষ করে তাঁর প্রশিক্ষকের পরামর্শে তিনি ম্যারাথন দৌড়ে অংশ নিয়ে অভাবনীয় সাফল্য তুলে আনতে সমর্থ হন।সর্বপ্রথম তিনি ২০১৭ সালে মাত্র ১৮ বৎসর বয়সে ফুলিয়া থেকে মায়াপুর পর্যন্ত ম্যারাথন দৌড়ে অংশ নিয়ে সফলতা অর্জন করেন।এরপর তাঁর অগ্রগমন তাঁকে থেমে থাকতে দেয় নি।২০২২ সালে তিনি ফুলিয়া থেকে ২০০০ কিমি পথ দৌড়ে কেদারনাথ যাত্রা সম্পন্ন করেন।২০২৩ সালে তিনি ফুলিয়া থেকে ২৩০০ কিমি পথ উজিয়ে পুরী, ভাইজ্যাক্ হয়ে চেন্নাই পৌঁছান ও ২০২৪ সালে তিনি ফুলিয়া থেকে ২৫০০ কিমি পথ দৌড়ে কাশ্মীর যাত্রায় সাফল্য পান।এ ব্যাপারে অ্যাথলিট মহীতোষ জানান যে, আমি উপর্যুপরি ৭ বার টাটা ম্যারাথনে অংশ গ্রহণ করেছি। চলতি বছরে ম্যারাথন দৌড়ে আমি দ্বিতীয় স্থান অধিকার করেছি।আমার স্বপ্ন, আল্ট্রা ম্যারাথনে রানার হিসেবে দেশের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করা , সর্বোপরি বিশ্বরেকর্ড করে  গিনেস বুক অফ ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসে নিজের নাম তুলে দেশ ও রাজ্যের নাম উজ্জ্বল করা।

মহীতোষের কৈলাস পর্বত ও মানস সরোবর দৌড় কে সর্বান্তঃকরণে সাধুবাদ জানিয়েছেন বিশিষ্টজনেরা 

ইতিহাস বিষয়ে মাস্টার ডিগ্রী অর্জন করা মহীতোষ আরও জানালেন যে, আমাকে কোচিং থেকে সব ধরনের সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেন আমার শুভাকাঙ্ক্ষী অতীশ সরকার, কাঁচরাপাড়ার সুনীল রায় ও অবসরপ্রাপ্ত কর্ণেল অমল সাহা। ইতিপূর্বে আমার প্রতিটি দৌড়ে আমার সহযোগী হিসেবে সাইকেল নিয়ে বিশ্বজিৎ পাল, মানিক ঘোষ, আকাশ বিশ্বাস ও গৌরব বিশ্বাসেরা সদাসর্বদা পাশে থেকে খাদ্য সামগ্রী থেকে  প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র সরবরাহ করে সহযোগিতা পাশে আবদ্ধ হয়েছেন ।তাঁদের প্রতি আমি কৃতজ্ঞ ।ইতিমধ্যে মহীতোষ কৈলাস পর্বত ও মানস সরোবরে যাওয়ার পরিকল্পনাকে বাস্তবায়িত করতে উঠে পড়ে লেগেছেন। তাঁর এই সফরের কারণে ফুলিয়া শিক্ষানিকেতনের সহপাঠী থেকে  শিক্ষকেরা ও তাঁর  শুভানুধ্যায়ীরা পাশে এসে দাঁড়িয়ে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়ে তাঁকে উৎসাহিত করছেন ।মহীতোষের বাবা মঙ্গল ঘোষ ও মা লক্ষ্মী ঘোষ যৌথভাবে জানান যে, মাহি (মহীতোষের ডাক নাম) ছোট থেকেই খেলাধুলো করতে ভালোবাসে।সে খুব চেষ্টা করছে দৌড়ে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করা ও দেশ তথা  দশের মুখ উজ্জ্বল করা।ফুলিয়ার বুঁইচা ঘোষপাড়ার বাসিন্দারা মহীতোষের কৈলাস পর্বত ও মানস সরোবর দৌড়ে অতিক্রম করার এই প্রয়াসকে সর্বান্তঃকরণে সাধুবাদ জানিয়ে সাফল্যের অগ্রগতি কামনা করেন ।
ছবি  : সংগৃহীত ।

Advertisement