মা সারদা দেবী
জগৎ কল্যাণে জগৎ জননী মা সারদা দেবী
জগৎ জননী মায়ের সত্য ও জ্ঞান, কল্যাণ ও সমাজসেবার ব্রতী দেখে সাধারণ মানুষ ঐশ্বরিক মাতৃত্ব খুঁজে পান

চন্দন চৌধুরী, জয়রামবাটী : পশ্চিমবঙ্গের বাঁকুড়া জেলার কোতুলপুর থানার অন্তর্গত জয়রামবাটি গ্রামে ১৮৫৩ সালে জন্মগ্রহণ করেন শ্রী রামকৃষ্ণদেবের পত্নী জগৎ জননী মা সারদা দেবী। তিনি ঐশ্বরিক ক্ষমতাকে লোক চক্ষুর আড়াল থেকে সরিয়ে রাখতেন এবং নিজেকে একজন সাধারণ মহিলা হিসেবে তুলে ধরতেন। জগৎ জননী মায়ের সত্য ও জ্ঞান, কল্যাণ ও সমাজসেবার ব্রতী দেখে সাধারণ মানুষ ঐশ্বরিক মাতৃত্ব খুঁজে পান ।
মা সারদা দেবী ১৮৬৩ থেকে ১৯১৫ সাল পর্যন্ত তিনি নিজে ছোট্ট খড়ের চালের বাড়িতে বসবাস করতেন। এবং ঐ বাড়ি থেকেই বহু মানুষকে তিনি ব্রহ্মচার্য, সন্ন্যাস লাভ ও দীক্ষা করিয়েছিলেন। মানুষের স্নেহ ভালবাসায় পরবর্তীতে ১৯১৫ থেকে ১৯১৬ সালে মধ্যে ভক্তরাই মাকে ভালো থাকার জন্য ও ভক্ত সমাবেশ বেশি হওয়ার ফলে একটি পৃথক বাড়ি নির্মাণ করেন।
মায়ের পবিত্র আমোদর নদ গঙ্গা নামে পরিচিত।যেখানে মা তার মহিলা ভক্তদের সাথে স্নানে আসতেন ও বেশিরভাগ সময় কাটাতেন গীতা ও চণ্ডীপাঠ করে। মা স্নান করতেন এমন এক জায়গায় একটি ঘাট নির্মাণ করা হয়েছে, বর্তমানে যা মায়ের ঘাট নামে পরিচিত।মায়ের বাড়ির পাশেই রয়েছে সিংহবাহিনী মন্দির। যেখানে মা মহামায়া ও চণ্ডীকে তিনি জাগ্রত দেবী হিসেবে পূজা করতেন এছাড়াও তিনি জগদ্ধাত্রী পূজার সূচনা করেছিলেন। স্বামী সারদানন্দ মায়ের বাড়ির পাশে একটি জমি বেছে পুকুর নির্মাণ করিয়েছিলেন। যা মায়ের নিত্য ব্যবহারের জন্য পুণ্য পুকুর নামে পরিচিত।
১৮৫৯ সালের মে মাসে মাত্র পাঁচ বছর বয়সে বিবাহ সূত্রে আবদ্ধ হন। শ্রী রামকৃষ্ণ পরমহংস দেবের সঙ্গে বিবাহের পর সারদা দেবী পিতা-মাতার কাছেই রইলেন। অপরদিকে রামকৃষ্ণ ফিরে গেলেন দক্ষিণেশ্বর এরপর ১৪ বছর বয়সে প্রথম সারদা দেবী কামারপুকুরে আসেন। তখনই তিনি ধ্যান ও আধ্যাত্ম জীবনের নির্দেশ পান স্বামীর কাছ থেকে। ১৮ বছর বয়সে শোনেন তার স্বামী পাগল হয়ে গেছেন। তখন তিনি দক্ষিণেশ্বরে আসার সিদ্ধান্ত নেন। পদব্রজে আসতে গিয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েন কথিত আছে ঘোর কৃষ্ণবর্ণা এক নারীর দর্শনে তিনি সুস্থ হয়ে ওঠেন। ১৮৮৫ সাল পর্যন্ত তিনি দক্ষিণেশ্বরে ছিলেন। ১৮৮৬ সালের আগস্ট মাসে শ্রী রামকৃষ্ণের মৃত্যুর পর বৈধব্যের চিহ্ন হিসাবে বালা খুলতে গেলে তিনি স্বামীর দিব্যদর্শন পান। ঐ দর্শনে শ্রীরামকৃষ্ণ তাকে বলেন, "আমি মারা যায়নি কেবল এক ঘর থেকে অন্য ঘরে গেছেন"।
শ্রী রামকৃষ্ণের প্রয়াণের দু সপ্তাহ পর লক্ষ্মী দেবী ও গোপাল মা প্রমুখ শ্রীরামকৃষ্ণের সন্ন্যাসী শিষ্যদের নিয়ে উত্তর ভারত তীর্থে বের হন। তিনি দর্শন করেন রামচন্দ্রের অযোধ্যা ও কাশী বিশ্বনাথ মন্দির এবং পরে তিনি বৃন্দাবন দর্শন করেন। ১৯১৯ সালের জানুয়ারি মাসে জয়রামবাটি যাত্রা করেন। সেখানে তিনি এক বছর ছিলেন। ১৯২০ সালে ২৭ শে ফেব্রুয়ারি শারীরিক অসুস্থতার জন্য কলকাতায় আনা হয়। পরের পাঁচ মাস তিনি রোগ যন্ত্রণায় অত্যন্ত কষ্ট পান। মৃত্যুর পূর্বে এক শিষ্যাকে উপদেশ দিয়েছিলেন, "যদি শান্তি চাও, মা কারো দোষ দেখনা, দোষ দেখবে নিজের। কেউ পর নয় মা, জগৎ তোমার।"
১৯২০ সালের ২০ শে জুলাই রাত্রি দেড়টায় কলকাতায় প্রয়াণ ঘটে। বেলুড়মঠে গঙ্গার তীরে শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়।

Comments