Kabaddi

টালির ঘরে বাস করে জাতীয় জুনিয়র কবাডিতে সমুজ্জ্বল ডানকুনির রঘুনাথপুরের মেয়ে শ্রেয়া নস্কর

মে মাসের ৯ তারিখ থেকে ১২ তারিখ পর্যন্ত মহারাষ্ট্রের ওয়াধায় অনুষ্ঠিত অ্যামেচার কবাডি ফেডারেশন অব ইন্ডিয়ার সহযোগিতায় বিদর্ভ কবাডি অ্যাসোসিয়েশনের ৫১ তম জাতীয় জুনিয়র কবাডি প্রতিযোগিতায় বাংলার দুরন্ত লড়াকু কিশোরীরা দুর্বার গতিতে ম্যাচ জিতে চূড়ান্ত পর্যায়ে অংশ গ্রহণের সুযোগ অর্জন করে ।কিন্তু ফাইনালে প্রতিপক্ষ হরিয়ানার মুখোমুখি হয়ে ৫১- ২১ পয়েন্টের ব্যবধানে বাংলার মেয়েদের রানার্স হয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হয় ।বাংলার এই জুনিয়র কবাডি টিমে ডানকুনির রঘুনাথপুরের অসম সাহসী কন্যা শ্রেয়া নিজের জাত চিনিয়ে বাংলা জুনিয়র কবাডি দলে প্রতিনিধিত্ব করার দুর্লভ সুযোগ হাতিয়ে নেয়

বিদ্যুৎ ভৌমিক  : গরিব ঘরে জন্মেও প্রতিভার উন্মেষ ঘটিয়ে যে অভাবনীয় সাফল্য তুলে আনা যায়, তা আবার হাতেনাতে প্রমাণ করে আশার আলো দেখিয়েছে টালির ঘরে বাস করা হুগলি জেলার ডানকুনির রঘুনাথপুরের পঞ্চদশী কন্যা রঘুনাথপুর বালিকা বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণীতে পাঠরতা শ্রেয়া নস্কর।সূত্রের খবর, গত মে মাসের ৯ তারিখ থেকে ১২ তারিখ পর্যন্ত মহারাষ্ট্রের ওয়াধায় অনুষ্ঠিত অ্যামেচার কবাডি ফেডারেশন অব ইন্ডিয়ার সহযোগিতায় বিদর্ভ কবাডি অ্যাসোসিয়েশনের সুচারু ব্যবস্থাপনায় ৫১ তম জাতীয় জুনিয়র কবাডি প্রতিযোগিতায় বাংলার দুরন্ত লড়াকু কিশোরীরা দুর্বার গতিতে তৎপর হয়ে একাদিক্রমে ম্যাচ জিতে চূড়ান্ত পর্যায়ে অংশ গ্রহণের সুযোগ অর্জন করে ।কিন্তু ফাইনালে প্রতিপক্ষ হরিয়ানার মুখোমুখি হয়ে ৫১- ২১ পয়েন্টের ব্যবধানে বাংলার মেয়েরা নিজেদের অনভিজ্ঞতার কারণে বশ্যতা স্বীকার করে রানার্স হয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হয় ।বাংলার এই জুনিয়র কবাডি টিমে ডানকুনির রঘুনাথপুরের অসম সাহসী কন্যা শ্রেয়া স্বীয় ক্রীড়া চাতুর্যের গুণে কবাডিতে মুন্সিয়ানা দেখিয়ে নিজের জাত চিনিয়ে বাংলা জুনিয়র কবাডি দলে প্রতিনিধিত্ব করার দুর্লভ সুযোগ হাতিয়ে নেয় ।খুবই ভালো খবর ।আর দেড় যুগ পরে বাংলার মেয়েরা রানার্স হওয়ার গৌরবে খুশি কোচ  সঙ্গীতা মন্ডল ও টিমের কর্মকর্তারা।

প্রতিকূল পরিস্থিতির সঙ্গে লড়াই করে সাফল্য অর্জন 

শ্রেয়ার সঙ্গে এই প্রতিবেদকের দূরাভাসে আলাপচারিতায় তার পরিবারের জীবন ও জীবিকার সাথে তার অসম লড়াইয়ের কথা উঠে আসে ।শ্রেয়ার বাবা রাজেন নস্কর ও মা আলপনা নস্কর ডানকুনির  এক কারখানায় কাজে  যুক্ত ।সংসারের হাল এতটাই দৈন্যদশা যে, একদিন কাজে না বেরুলে হাঁড়ি চড়ে না।শ্রেয়ার মাকে সকালে রান্না করে কাজে বেরুতে হয়।সে কারণে পরিবারের অর্থনৈতিক অবস্থা খুবই সঙ্কটজনক বলা চলে।ইঁটের গাঁথুনি দেওয়া টালির বাড়িতে তাদের  এক চিলতে বাস।ফলে বর্ষাকালে টালির ফাঁকফোকর দিয়ে ভেতরে জল চুইয়ে পড়ে ।এজন্য তাদের  জীবনযাত্রা একরকম দুর্বিষহ ও অসহনীয় হয়ে ওঠে ।তবুও নানা প্রতিবন্ধকতার আগল টপকে শ্রেয়াকে পড়াশুনার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে কবাডিতে মনোনিবেশ করতে হয় ।কারণ টিঁকে থাকার অদম্য বাসনা তার মনের মধ্যে ।প্রতিকূল পরিস্থিতির সঙ্গে লড়াইয়ে হার মানার কথা সে কখনো মনে স্থান দেয় না। শ্রেয়া জানায় যে, সে ছোটবেলা থেকেই কবাডিকে আপন করে ভালোবেসে ফ্যালে ।ফলে কবাডির একাত্মবোধে সে নিজে অনুপ্রাণিত ।বিশেষত রঘুনাথপুর এস বি কবাডি ক্লাবের সম্পাদক পিনাকী জাঠির নাম তার কথার মাঝে বারে বারে উঠে আসে।এছাড়া  কবাডির কোচ বুবাই সামন্তর অকৃপণ সহযোগিতা তাকে বিশেষ ভাবে উদ্বুদ্ধ করে ফেলে ।তাঁদের অক্লান্ত পরিশ্রম শ্রেয়ার ভবিষ্যতে চলার পথে পাথেয় বলে শ্রেয়ার  অভিব্যক্তি ।কারণ সে নিজেই জানিয়েছে যে , তাকে এখনও অনেক দূর এগোতে হবে ।কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে খেলায় সেরাটুকু তাকে তুলে আনতে হবে ।সেই সঙ্গে জুনিয়র টিমে তাকে উন্নততর পারফরম্যান্স দেখিয়ে সিনিয়র দলে খেলার যোগ্যতা ছিনিয়ে নিতে হবে । সে কারণে এখন  কবাডিই তার ধ্যান জ্ঞান ।এই কবাডি তাকে তার বাবা ও মায়ের দুঃখ ঘোচাতে হবে ।অদূর ভবিষ্যতে তার জন্য একটা চাকরি সে দাবি করতে চায় ভালো  খেলার সুবাদে ।

কবাডিতে উজ্জ্বল প্রতিভার বিকাশ হুগলি জেলায় 

কবাডিতে অনুপ্রেরণায় শ্রেয়া তার বাবা ও মায়ের অবদানের কথা স্মরণ করে ।কারণ বাবা মার হাড়ভাঙা খাটুনির মধ্যেও কবাডিতে তার যাতে ছেদ না ঘটে, তার জন্য তাঁরা সদাসর্বদা সচেষ্ট ।তাঁরা যৌথভাবে জানান যে, আমরা মেয়েকে খেলার জন্য সুষম খাবার দিতে পারিনি ।ঘরের যৎসামান্য  খাদ্য খেয়ে আজ জাতীয় জুনিয়র কবাডি দলে নিজের জায়গা পাকা করে নিয়ে নজরকাড়া যোগ্যতা দেখিয়েছে।আগামী দিনে শ্রেয়া সিনিয়র দলে খেলার সুযোগ লাভ করে নিজের ক্যারিশমাকে তুলে ধরে বাংলার নাম  উজ্জ্বল করুক। সংসারে শত অভাব অনটনকে উপেক্ষা করে শ্রেয়া পড়াশুনার পাশাপাশি কবাডিতে দৃষ্টান্তমূলক সাফল্য পেতে ইচ্ছুক ।ইতিমধ্যে সে স্থানীয় মহলে নিজের দুরন্ত ফর্ম ধরে রেখে সাফল্য জিতে নিয়ে মহকুমা ও জেলা স্তরের কবাডিতে নিজের নামের প্রতি সুবিচার করে উজ্জ্বল প্রতিভার স্বাক্ষর রেখে জানান দিয়েছে যে , পরিশ্রমের বিকল্প আর কিছু নেই আর সদিচ্ছার তুলনা হয় না ।

বাংলার জুনিয়র কবাডিতে স্থান অর্জন 

শ্রেয়া জাতীয় জুনিয়র কবাডিতে খেলার সুযোগ পেয়ে স্বভাবতই খুশি ।তার দল বাংলা দুরন্ত গতিতে এগিয়ে গেলেও লিগ পর্যায়ে অপ্রতিরোধ্য গতিতে অপরাজিত থেকেও নক আউটে   পৌঁছায়।কিন্তু ফাইনালে তাদের অভিজ্ঞতার অভাবে হরিয়ানার কাছে হার মানতে হয় ।রানার্স আপ হয়ে ট্রফি নেওয়ার সময় মহারাষ্ট্রের মাননীয় মুখ্যমন্ত্রী দেবেন্দ্র ফডনবিশ, অভিনেতা সুনীল শেট্টি, আকাঙ্খা শর্মা, সাংসদ প্রফুল্ল প্যাটেল, জাতীয় কবাডি সংস্থার সচিব এ উসি রেড্ডি ও বিদর্ভের কবাডি সচিব প্রদীপ সিংহ ঠাকুর প্রমুখ গণ্যমান্য ব্যক্তিদের সান্নিধ্য লাভ করে গ্রামের প্রতিশ্রুতি সম্পন্ন লড়াকু মেয়ে শ্রেয়া অনুপ্রাণিত ও উজ্জ্বল রূপে নিজেকে চিনিয়েছে ।রঘুনাথপুর এস বি কবাডি ক্লাবের সম্পাদক পিনাকী জাঠির বক্তব্য তাঁর কবাডি ক্লাব ক্রীড়া জগতে তার নিজস্বতা আজও বজায় রেখে চলেছে ।ক্লাবের উঠতি মেয়ে শ্রেয়া অভাবের মধ্যেও  কঠোর অনুশীলনের মাধ্যমে নিজেকে গড়ে তুলে বাংলার জুনিয়র কবাডিতে স্থান করে নিয়েছে ।আগামী দিনে সে তার ক্রীড়াদক্ষতাকে ধরে রাখতে পারলে অনেক দূর এগিয়ে যেতে সমর্থ হবে ও দেশ তথা বাংলার মুখ উজ্জ্বল করবে ।
ছবি  : সংগৃহীত ।

Advertisement