Yoga

বিয়ের চাপকে উপেক্ষা করে যোগাসনে নয়া নজির মগরার যোগাকন্যা প্রমিতার

আর্থিক দুরবস্থার মধ্যেও নিজের  ও মায়ের স্বপ্নপূরণকে বাঁচিয়ে রাখার তাগিদে দুর্বার গতিতে তৎপর হয়ে উঠেছেন মগরার প্রতিশ্রুতিসম্পন্ন যোগাকন্যা প্রমিতা সিংহ

বিদ্যুৎ ভৌমিক : বিয়েসাদির চাপকে অবহেলার চোখে দেখে অভীষ্ট লক্ষ্যের পথে এগিয়ে যেতে বদ্ধপরিকর হুগলি জেলার মগরার অভাবী ঘরের মেয়ে স্থানীয় প্রভাবতী উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের দ্বাদশ শ্রেণীতে পাঠরতা সপ্তদশী কন্যা প্রমিতা সিংহ ।ইতিমধ্যে সে জাতীয় স্তরের যোগা প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে নিজের নামের প্রতি সুবিচার করে উজ্জ্বল প্রতিভার স্বাক্ষর রেখে নিজের জাত চিনিয়েছে।তারই সুবাদে কন্যাশ্রী দিবসে তার  লড়াইকে স্বীকৃতি দিয়ে তাকে সম্মান জানাবে রাজ্য সরকার ।

সূত্রের খবর, ছোটবেলা থেকে প্রমিতার খেলার প্রতি অদম্য আগ্রহ পরিলক্ষিত হয়।জীবনযুদ্ধে সে এক অনন্য প্রেরণা ।যখন সে ক্লাস নাইনে পড়ে, তখন তার বাবা গৌতম সিংহ মেয়ের বিয়ের ব্যাপারে আগ্রহ দেখিয়েছিল।মুখচোরা হয়েও বিয়ের কথা শুনে  প্রমিতা বেঁকে বসে আপত্তি দিয়ে বাবাকে জানিয়েছিল, সে পড়তে চায় ।যোগাসনের শিখরে পৌঁছতে চায়।মেয়ের কথায় রাগান্বিত হয়ে বিয়েতে রাজি না হওয়ার জন্য তার বাবা তিন বছর আগে বাড়ি  ছেড়ে চলে যান। এমতাবস্থায় প্রমিতার মা সঞ্চারী সিংহ মেয়েকে নিয়ে তাঁর মায়ের বাড়ি ত্রিবেণীর শিবপুরে চলে আসেন।সেখানে এক জুতোর দোকানে অল্প মাইনেতে কাজে লেগে যান।এই সামান্য বেতনে পরিবারের সকলের পেট চালানো অসম্ভব হয়ে পড়ে ।তবুও তাদের মতো দুঃস্থ পরিবারের অসম লড়াই থেমে থাকেনি ।

প্রমিতার মা সঞ্চারী সিংহ জানান যে, মেয়ে ৫ বৎসর বয়স থেকেই যোগাসন শিখছে ।সে আরও পড়াশুনা করে নিজের পায়ে দাঁড়াবে ।যোগাসনে প্রতিষ্ঠা পাবে দেশ বিদেশের মাটিতে ।স্কুলে পড়াশুনার পাশাপাশি যোগাসনেও সে নিজেকে নতুন করে গড়ে তুলতে সচেষ্ট ।২০২৩-২৪ বর্ষে পাঞ্জাবে অনুষ্ঠিত চতুর্থ সাব জুনিয়র ও জুনিয়র জাতীয় যোগা চ্যাম্পিয়নশিপ প্রতিযোগিতায় প্রমিতা ব্রোঞ্জ পদক জয় নিজের মুঠোয় আনতে সমর্থ হয়।২০২৪ সালে সে 'খেলো ইন্ডিয়া ' - য় যোগাসন কম্পিটিশনে সর্বপ্রথম পুরস্কারে ভূষিত হয়।ঐ বছরেই ভোপালে আয়োজিত জাতীয় যোগা অলিম্পিয়াডে তার  দ্বিতীয় স্থানা অধিকার তাকে ক্রীড়ামোদীদের চিনতে সুবিধা করেছে।চলতি বছরে মহারাষ্ট্রে আয়োজিত ৬৮ তম জাতীয় বিদ্যালয় ক্রীড়া  প্রতিযোগিতায় প্রমিতা তৃতীয় স্থানাধিকারিণী ।এ বছরের সেপ্টেম্বর মাসে অন্ধ্রপ্রদেশে অনুষ্ঠিতব্য জাতীয় যোগাসন প্রতিযোগিতায়  অংশগ্রহণের জন্য প্রমিতার পাখির চোখ ঐ  কম্পিটিশনে নিবিষ্ট ।সে জানায়, এশিয়ান গেমস ও অলিম্পিকে দেশের প্রতিনিধিত্ব করে দুঃখী মায়ের আর আমার নিজের স্বপ্নপূরণ করতে চাই ।

আরও জানা যায় যে, সুদীর্ঘ ১২ বৎসর যাবৎ প্রমিতাকে যোগাসনে কঠোর অনুশীলনে ব্যস্ত রেখেছেন তার প্রশিক্ষক ত্রিবেণী মনসাতলার যোগাবিদ স্বপ্না পাল।তিনি নিঃস্বার্থভাবে তাঁর ছাত্রীকে প্রশিক্ষণ দেওয়া  ছাড়া অন্য অন্য রাজ্যে কম্পিটিশনে অংশ গ্রহণের জন্য সম্যক খরচও বহন করেন ।মগরা প্রভাবতী উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মহুয়া চট্টোপাধ্যায় জানান যে, প্রমিতা খুবই লাজুক।মুখ ফুটে কিছু চাইতে পারে না ।তবুও আমরা স্কুলের পক্ষ থেকে যতটা সম্ভব, ওর পাশে থাকার চেষ্টা করছি।আর্থিক দুরবস্থার মধ্যেও নিজের  ও মায়ের স্বপ্নপূরণকে বাঁচিয়ে রাখার তাগিদে দুর্বার গতিতে তৎপর হয়ে উঠেছেন মগরার প্রতিশ্রুতিসম্পন্ন যোগাকন্যা প্রমিতা সিংহ ।
ফটো  : সংগৃহীত ।

Advertisement