ত্রিপুরা
দিনের শেষে 'হিরো মুখ্যমন্ত্রীই'! রাতের মধ্যেই মুল অভিযুক্ত সহ ৫ জন পুলিশের জালে, মুখ্যমন্ত্রী ও অর্থমন্ত্রীর সমবেদনা, সিপিআই(এম) ও কংগ্রেসের ক্ষোভ-বিক্ষোভ, অঞ্জলি সরকার মৃত্যুর ঘটনায় তোলপাড় রাজ্য!
গৃহবধূ অঞ্জলি সরকারের অগ্নিদগ্ধ মৃত্যুতে উত্তাল রাজ্য রাজনীতি
যশপাল সিং, ত্রিপুরা : কাঁকড়াবন বিধানসভা কেন্দ্রের মির্জা এলাকার গৃহবধূ অঞ্জলি সরকারের অগ্নিদগ্ধ মৃত্যুতে উত্তাল রাজ্য রাজনীতি। বরোদা ব্যাংকের সামনে থেকে তাঁর দেহ উদ্ধার হওয়ার পর থেকেই চাঞ্চল্য তৈরি হয়। পরিবার ও স্থানীয়দের অভিযোগ—স্থানীয় দুষ্কৃতীরা হামলা চালায় অঞ্জলি ও তাঁর স্বামী পঙ্কজ সরকারের উপর, এমনকি থানায় অভিযোগ জানানোর পর ফের হুমকি আসে। শনিবার নিহতের স্বামী ও পরিবারের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে শোকপ্রকাশ করেন অর্থমন্ত্রী প্রণজিৎ সিংহ রায়। তাঁর সঙ্গে ছিলেন বিধায়ক অভিষেক দেবরায়, জেলা সভানেত্রী সবিতা নাগ, বিপিন দেববর্মা ও মন্ডল নেতৃত্ব। অর্থমন্ত্রী আশ্বস্ত করেন—“এই কঠিন সময়ে সরকার ও দল পরিবারের পাশে রয়েছে।” পাশাপাশি তিনি ঘটনার পূর্ণাঙ্গ তদন্তের নির্দেশ দেন এবং বলেন, “অঞ্জলি সরকারের মৃত্যুর প্রকৃত রহস্য উদঘাটন করতেই হবে।”
এদিকে, পরিবারের অভিযোগ কাঁকড়াবন থানার ওসি জয়ন্ত মালাকার দুষ্কৃতীদের প্রশ্রয় দিয়েছেন। ফলে তাঁকে অবিলম্বে সাসপেন্ড করার দাবি তুলেছেন শোকস্তব্ধ পরিবার। ইতিমধ্যেই গোমতী জেলার এসপি প্রাথমিকভাবে এএসআই সঞ্জয় সরকারকে সাসপেন্ড করা হয়।
অন্যদিকে, কংগ্রেস নেতৃত্বও নিহতের পরিবারের পাশে দাঁড়িয়েছে। আজ ঘটনাস্থলে গিয়ে সমবেদনা জানান কংগ্রেস পরিষদীয় দলনেতা বীরজিৎ সিনহা, বিধায়ক সুদীপ রায় বর্মন, স্থানীয় নেতা টিটন পাল সহ অন্যান্যরা। তারা হত্যাকারীদের দ্রুত গ্রেপ্তারের দাবি তোলেন এবং জেলা পুলিশ সুপারের কাছে একটি পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট জমা দেন। কংগ্রেসের হুঁশিয়ারি—“দ্রুত পদক্ষেপ না নিলে আমরা রাস্তায় নামতে বাধ্য হবো।”
তবে মুখ্যমন্ত্রী ড. মানিক সাহার তৎপরতায় অঞ্জলি সরকার হত্যা মামলায় সকল অভিযুক্ত গ্রেফতার হয়। ধৃতরা হলো—আকাশ দাস, অনুপম মজুমদার ওরফে মান্না, কিঙ্কর দাস এবং দীপ্তনু দাস ওরফে পুছকা। মূল অভিযুক্ত লিটন দাসকেও পরবর্তী সময় পুলিশ জালে তুলতে সক্ষম হয়। সিসিটিভি ফুটেজও প্রকাশ্যে চলে আসে। মুখ্যমন্ত্রী সামাজিক মাধ্যমে জানিয়েছেন, মির্জার এই নারকীয় হত্যাকাণ্ডের পূর্ণাঙ্গ তদন্ত হবে।
অন্যদিকে, ঘটনাটি নিয়ে সরব হয় বাম দলও। মৃতার বাড়ি পরিদর্শন শেষে বাম বিধায়ক দল ঘোষণা করেছে, এই হত্যাকাণ্ড বিধানসভায় উত্থাপন করা হবে। আজ পুলিশ সদর কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভে উত্তাল হয় বামেরা। মহিলা হত্যাসহ একাধিক অপরাধমূলক ঘটনার প্রতিবাদে মিছিল করে বাম নেতা–কর্মীরা। এসময় পুলিশের সঙ্গে ধস্তাধস্তি হয় এবং দলীয় অফিসে ভাঙচুরের ঘটনাও ঘটে। সব মিলিয়ে, অঞ্জলি সরকার হত্যাকাণ্ড ঘিরে শাসক, বিরোধী ও জনমনে ক্ষোভ চরমে। আইনের শাসন বজায় রেখে প্রকৃত দোষীদের শাস্তি দিতে পারবে কি রাজ্য সরকার?—এ প্রশ্ন এখন ত্রিপুরা জুড়ে।

Comments