Murder

মদ্যপ অবস্থায় অকথ্য গালিগালাজ, প্রতিবাদ করায় লোহার রড দিয়ে নৃশংসভাবে হত্যা প্রতিবাদীকে, ব্যাপক চাঞ্চল্য এলাকায়

দুর্গাপুর কোকওভেন থানার অন্তর্গত করঙ্গপাড়া গ্রামে মদ্যপ যুবকের হাতে মৃত্যু প্রতিবাদীর

 বিধান চন্দ্র গাঙ্গুলী, দুর্গাপুর :  মদ্যপ অবস্থায় অকথ্য গালিগালাজ, প্রতিবাদ করায় লোহার রড দিয়ে নৃশংসভাবে হত্যা প্রতিবাদীকে, ব্যাপক চাঞ্চল্য এলাকায় । চাঞ্চল্যকর এই ঘটনাটি ঘটেছে দুর্গাপুর কোকওভেন থানার অন্তর্গত ৩০ নম্বর ওয়ার্ডের ভগৎ পল্লী এলাকায়। মৃতের নাম যীশু কুমার ওরফে রাজেশ, বয়স ৪৬ বছর, ভগৎ পল্লী এলাকার বাসিন্দা, পেশায় ট্যাংকার চালক। এই ঘটনায় একজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। ধৃতের নাম পিন্টু বাউরী, করঙ্গপাড়ার বাসিন্দা।

প্রতিবাদ করতে গিয়ে প্রতিবাদীর মৃত্যু 

 ঘটনার সূত্রপাত ২৭ মে ২০২৫ মঙ্গলবার সন্ধ্যায়। সূত্র মারফত খবর, মঙ্গলবার সন্ধ্যায় যীশু ২০দিন পর কাজ সেরে ভগৎ পল্লীর বাড়িতে ফিরছিল। সেই সময় ৩০ নম্বর ওয়ার্ডের করঙ্গপাড়া গ্রামের চারমাথা মোড়ের কাছে একটি গাছের তলায় বসে পিন্টু বাউরী মদ্যপ অবস্থায় যীশু কুমারকে উদ্দেশ্য করে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করছিল। এর প্রতিবাদ করে যীশু। অভিযোগ, এরপরই উভয়ের মধ্যে বাক্য বিনিময় হতে হতে তা ক্রমেই উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। বচসায় জড়িয়ে পড়ে দুজনে। বচসার মাঝে হঠাৎই লোহার রড দিয়ে যীশুর মাথায় সজোরে আঘাত করে পিন্টু। মুহূর্তেই রক্তাক্ত অবস্থায় মাটিতে লুটিয়ে পড়ে যীশু। 

আত্মসমর্পণ অভিযুক্তদের 

ঘটনার খবর জানাজানি হতেই খবর দেওয়া হয় কোকওভেন থানায়। স্থানীয়রা তড়িঘড়ি যীশুকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় দুর্গাপুর মহকুমা হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকেরা তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। অন্যদিকে অবস্থা বেগতিক বুঝে কোকওভেন থানায় এসে আত্মসমর্পন করে অভিযুক্ত পিন্টু বাউরী। ধৃতকে বুধবার সাত দিনের পুলিশি হেফাজত চেয়ে দুর্গাপুর মহকুমা আদালতে পেশ করা হয়। মৃতের স্ত্রী উত্তরা কুমার জানান, "তিনি ঘরেই ছিলেন। হঠাৎ ফোনে খবর পান তাঁর স্বামী রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে রয়েছে। এরপর পুলিশে খবর দেওয়া হয়। তাঁর স্বামীকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে তাকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসকেরা।" ধৃতের কঠোরতম শাস্তির দাবি জানিয়েছেন তিনি। 

এলাকায় চাঞ্চল্য, প্রতিবেশীদের  দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবী

মৃতের প্রতিবেশী সামসুল মল্লিকের অভিযোগ, "পিন্টু বাউরী মদ্যপ অবস্থায় যীশুকে গালি দিচ্ছিল। যীশু প্রতিবাদ করায় তাঁর মাথায় লোহার রড দিয়ে বারি মারে পিন্টু। তৎক্ষণাৎ মাটিতে লুটিয়ে পড়ে যীশু।" পিন্টুর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবী জানান তিনি। মৃতের অপর প্রতিবেশী আশা খাতুন অভিযোগ করেন, "পিন্টু এলাকায় নানান অপরাধমূলক কর্মকান্ডের সাথে জড়িত। এর আগেও পিন্টু চারটে খুন করেছে।" ধৃতের ফাঁসির দাবী জানান তিনি। মৃত যীশু কুমারের দুই সন্তান। বড় ছেলে দ্বাদশ শ্রেণীর ছাত্র এবং মেয়ে ছোট, স্কুলে পড়ে। পরিবারের একমাত্র উপার্জনের স্রোত ছিল যীশু। এমতাবস্থায় তাঁর আকস্মিক মৃত্যুতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে তাঁর পরিবারে। 

মদ্যপের হাতে খুনের ঘটনায় রাজনৈতিক তরজা 

অপরদিকে এই ঘটনাকে নিয়ে শুরু হয়েছে জোরদার রাজনৈতিক তরজা। বিজেপি নেতা চন্দ্রশেখর বন্দ্যোপাধ্যায় অভিযোগ করেন, "এই এলাকায় পাড়ার ভেতর মদের দোকান রয়েছে। ফলে পাড়ার মধ্যেই সর্বসমক্ষে মদ্যপান করে কুকথা, গালি দেওয়া সবই চলে। আজ এর জেরে একজনের মৃত্যু ঘটল। পুলিশ প্রশাসনকে আরও সক্রিয় ভূমিকা পালন করতে হবে এবং এইসব মদের দোকান অবিলম্বে বন্ধ করতে হবে।" অভিযুক্তের মৃত্যুদণ্ডের দাবি জানান তিনি। অন্যদিকে,  জেলা তৃণমূল কংগ্রেসের সহ সভাপতি উত্তম মুখোপাধ্যায় বলেন, "যা ঘটেছে তা অত্যন্ত দুঃখজনক ঘটনা। অভিযুক্তের উপযুক্ত শাস্তি হবে। তবে এটা নিয়ে রাজনীতি করা ঠিক নয়। বিজেপি আগে নিজেদের রাজ্য উত্তরপ্রদেশ নিয়ে ভাবুক। কাশ্মীরে চার জঙ্গী এসে নিরীহ মানুষদের খুন করল কিন্তু এখনো তারা অধরা। আগে বিজেপি এসব নিয়ে ভাবুক তারপর বাংলা নিয়ে বলতে আসবে।" আপাতত এই ঘটনার তদন্তে নেমেছে পুলিশ। ব্যক্তিগত আক্রোশ থেকেই খুন নাকি অন্য কোনো ষড়যন্ত্র রয়েছে এই ঘটনার পিছনে তার রহস্য উন্মোচনে ধৃতকে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেছে  পুলিশ।

Advertisement