নাটক

নাট্যমঞ্চে প্রকরণ-এর "বাক্সবন্দী": সমাজ-প্রতিচ্ছবির তীক্ষ্ণ অবক্ষয়

প্রতিটি বাক্স যেন এক একটি জীবনের কাহিনি। সমাজের চাপে, সম্পর্কের গণ্ডিতে, নিজের ভেতরের দ্বন্দ্বে মানুষ কেমন করে ধীরে ধীরে বন্দি হয়ে পড়ে—তারই প্রতীকী উপস্থাপনা “বাক্সবন্দী"।

সঞ্জনা সমাদ্দার, কলকাতা : নাট্যশিল্প শুধু বিনোদনের মাধ্যম নয়—তা সমাজের দর্পণও বটে। এই বার্তা নিয়েই মঞ্চে এল প্রকরণ নাট্য গোষ্ঠী-র নতুন প্রযোজনা "বাক্সবন্দী"। সমাজের নীরব বাক্সে বন্দি মানুষের যন্ত্রণা প্রকাশ পেল এই মঞ্চে।আজকের সমাজে আমরা সবাই কোথাও না কোথাও 'বাক্সবন্দী'—এই নাটক সেই অভিজ্ঞতারই এক রূপক ভাষ্য।" মঞ্চে এক ভিন্ন অভিজ্ঞতা উপহার দিল এই নাটক, যেখানে প্রতিটি চরিত্র যেন জীবনের বাস্তবতা ছুঁয়ে ফেলেছে।নাটকের শুরু থেকেই আবহ এক রহস্যময় থমথমে। মঞ্চে একের পর এক বাক্স—তাদের ভেতর আবদ্ধ মানুষ, যারা চায় মুক্তি, চায় প্রশ্ন তুলতে, অথচ চারপাশের সামাজিক প্রাচীর, সম্পর্কের দায়, পেশার শৃঙ্খল—সব মিলিয়ে এক কঠিন বদ্ধতা। নাটকটি এক অদৃশ্য ব্যাস্ততার ছবি, যা আমাদের প্রত্যেকের জীবনেরই অংশ। 

এই নাটক প্রতীকী ভাষায় সমাজের গঠনগত সমস্যা ও মানুষের মানসিক বন্দিত্ব,বাস্তব ও বিমূর্ততার মেলবন্ধনে গঠিত দৃশ্যবিন্যাস, আলোর ও অন্ধকারের কাব্যিক ব্যবহার,দর্শকের মানসিক অভিজ্ঞতা তৈরির এক নিখুঁত চিত্রনাট্য।নাটকটি শুরু থেকেই দর্শকদের টেনে ধরে। একের পর এক বাক্স আর তার মধ্যে বন্দি মানুষেরা—প্রতিটি বাক্স যেন এক একটি জীবনের কাহিনি। সমাজের চাপে, সম্পর্কের গণ্ডিতে, নিজের ভেতরের দ্বন্দ্বে মানুষ কেমন করে ধীরে ধীরে বন্দি হয়ে পড়ে—তারই প্রতীকী উপস্থাপনা “বাক্সবন্দী"।নাট্য পরিচালনায় ছিলেন রাজর্ষি ধাড়া। ইতিমধ্যেই,তাঁর সূক্ষ্ম নির্দেশনা, দৃশ্য বিন্যাস এবং মঞ্চের ব্যবহার দর্শকদের প্রশংসা কুড়িয়েছে।

এই নাটকে অভিনয় করেন রিতম, মেঘবালিকা, জয়, দেবপ্রিয়া,শ্রীজাত এবং সায়নী। এরই মধ্যে শুভদীপ এবং তানিশা র গানের কলি সংলাপহীন মুহূর্তগুলোতেও ফুটিয়ে তুলেছে গভীর মানসিক বেদনা। "বাক্সবন্দী", শুধুই একটি নাটক নয়—এ যেন জীবনের ভেতরে আটকে পড়া নীরব চিৎকারের রূপান্তর। মানুষের অবচেতন, তার অতীত, সমাজের বাধ্যতামূলক দায়বদ্ধতা, সব মিলিয়ে এক দমবন্ধ ভাব তৈরি করে নাটকটি। চরিত্রগুলো যেন আমরা নিজেরাই। কেউ পুরনো সম্পর্কের আবরণে বেঁধে আছে, কেউ সমাজের "কী বলবে"তে ভয় পায়, আবার কেউ নিজের স্বপ্নকেই মনে করে ভুল।প্রতিটি দৃশ্য যেন মননে আঁচড় কাটে।শেষ দৃশ্যে বাক্সে বন্দী চরিত্রটি যখন নিজেই বাক্সের দেওয়ালে ধাক্কা মারে, তখন যেন দর্শক বুঝতে পারে—এই বাক্সটা বাইরের নয়, নিজের মনের ভিতরের। একইসাথে,দর্শকদের প্রতিক্রিয়া ছিল আবেগঘন। এই নাটক সেই নিঃশব্দ আবেগেরই প্রতিচ্ছবি।

Advertisement